নতুন বই
ড. মুহাম্মদ জমির হোসেন-এর
‘নির্বাচিত গল্প’
রুহুল গনি জ্যোতি
গবেষক-গীতিকার-কথাশিল্পী ড. মুহাম্মদ জমির হোসেনের গল্পগুলো থেকে নির্বাচিত মোট ৩৩টি গল্প এ গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। সহজ সরল সাবলীল ও সাদামাটা ভাষায় রচিত এসব গল্পের চরিত্রগুলো সমাজেরই চারপাশের মানব-মানবী, যারা একদিকে যেমন আবহমান গ্রাম বাংলার মানব প্রকৃতির স্বরূপ চিনিয়ে দিতে সক্ষম, তেমনি এতে রয়েছে নাগরিক জীবন-যন্ত্রণায় জর্জরিত ক্ষতবিক্ষত ভগ্নহৃদয়ের নানা চরিত্র।
মানব জীবন যেন এক নদী প্রবাহের মত অদিকাল থেকে অনন্তের পানে বহমান। এই যাত্রা পথে অজকের নারী-পুরুষ, নিসর্গ-প্রকৃতি, উত্থান-পতন, প্রেম-ভালবাসা, রাজনীতি-অর্থনীতি, শিল্প-সংস্কৃতি নানাভাবে জীবনকে আলোড়িত ও প্রভাবিত করে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। জীবনের বাঁকে বাঁকে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাত্র-পাত্রীরাই এসব গল্পের মূল চরিত্র। গল্পের কোনটা নায়ক-নায়িকা প্রধান আবার কোনটাতে রয়েছে খল নায়কদের প্রাধান্য। গ্রন্থিত গল্পগুলো অত্যন্ত সহজবোধ্য এবং সুখপাঠ্য।
গ্রন্থের প্রথম গল্প ‘ভৃগু’ শুরু হয়েছে অদৃষ্ট-তাড়িত এক মানব জীবনে করুণ পরিণতির কথা দিয়ে। যেখানে আকস্মিক বজ্রপাতে শিক্ষক খগেন চন্দ্রপালের করুণ মৃত্যু হয়- যিনি এলাকায় একজন দেবতুল্য মানুষ হিসেবে বিবেচিত হতেন তার এই ধরণের মৃত্যু এলাকাবাসীকে মর্মাহত করে। অপরদিকে সড়ক-দুর্ঘটনায় দুর্নীতিবাজ ইন্সপেক্টর অতুলচন্দ্র বিশ্বাসের সপরিবারে মৃত্যু হলেও ধ্বংসস্তুপ থেকে তার আটমাস বয়সী নাতিন হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসে। এসব ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পাগল ভৃগু এই গল্পের অন্যতম চরিত্র, যে আসলে ভৃগুর রূপকার্থে উপস্থাপিত হয়েছে। সে বরাবরই ভগবানকে গালিগালাজ করে- তার লীলাখেলা নিয়ে তার রয়েছে নানা প্রশ্ন!
‘ফেলানী’ মূলত জীবন-যুদ্ধে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে গল্পের নায়িকা ফেলানীর জয়লাভের গল্প। অনেক কষ্ট-সংগ্রাম ও ত্যাগের পর গল্পের ফেলানী জয়লাভ করে, যার মাধ্যমে ইতিবাচক মানসিকতাই প্রকাশিত হয়েছে। এ গল্পের শিহাব অসাধু ব্যবসায়ী হলেও ফেলানীর স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আকুতি তাকে স্পর্শ করে এবং ফেলানীকে সে এড়িয়ে যেতে পারে না। তাকে উদ্ধারের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ী শিহাব নিজের কৃতপাপ মোচনের একটি পথই যেন দেখতে পায়!
‘জলে ভাসা চাঁদ’ মূলত পরকীয়া প্রেমে মত্ত এক মাঝবয়েসি উঠতি ধনী ব্যবসায়ী শফিক রহমানের স্ত্রী-কন্যা, সংসার, ব্যবসা ও প্রেমিকাকে নিয়ে সৃষ্ট নানা দ্বন্দ্ব-সংঘাতের বিবরণ। শেষ পর্যন্ত শফিক রহমান প্রেমিকার সঙ্গে রোমাঞ্চের মধ্যেই মনে মনে ঘরে ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়ার মাধ্যমেই স্বস্তি খোঁজার চেষ্টা করেন। সড়ক দুর্ঘটনায় নায়িকার মৃত্যুর মাধ্যমে হঠাৎ জমে ওঠা রোমান্টিক প্রেমের গল্পের বিয়োগান্তক পরিণতি ঘটে ‘সহযাত্রী’ গল্পটিতে। সড়ক দুর্ঘটনায় শিকার হয়ে মুহূর্তে জীবন প্রদীপ নিভে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আরিফের সহযাত্রী মেয়েটির। ঢাকায় যাওয়ার পথে বাসেই পরিচয় হয়েছিল তাদের। কিন্ত আকস্মিক সড়ক দুর্ঘটনার মেয়েটির মৃত্যু তাদের রোমান্টিক সম্পর্কের সম্ভাবনা নিমিষেই ধূলিসাৎ করে দিয়ে যায়।
এছাড়া রয়েছে- ঘরে ফেরা, বুড়োর বিয়ে, করোনা ও একটি ময়নাপাখির গল্প, দিলরুবা, আলিফ, প্রেতাত্মা, রাজনীতি, কংলাক পাহাড়, লাশ, কোহিনূর, জনৈক হেডমাস্টার, শিলা, উপরের নির্দেশ, বিদ্যায়তন, অনাহুত, যতবড় হোক ইন্দ্রধনু, চুপ, একটি ছবির জন্য, শুধু ভালবাসা, ভ্রষ্টানারীর সংসারসহ মোট ৩৩ টি গল্প।
বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন সজীব ওয়ার্সী। ৩২০ পৃষ্ঠার বইটি প্রকাশ করেছে কালিকলম প্রকাশনা। বইটির মূল্য ৬০০ টাকা।
#